পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পোল্ট্রি ফিড মিলারদের ভূমিকা ও ভেটেরিনারিয়ানদের করণীয়
দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পোল্ট্রি ফিড মিলারদের ভূমিকা ও ভেটেরিনারিয়ানদের করণীয় =
আমাদের পোল্ট্রি শিল্প অনেকটা এগিয়েছে।দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পোল্ট্রি খামার ।আছে মাংস উৎপাদনের জন্য সোনালী জাতের মুরগি, ব্রয়লার মুরগি, কালিং মুরগি, কালিং কোয়েল, হাঁস এছাড়াও পোল্ট্রি শিল্পে নতুন সংযোজন হয়েছে টার্কি, গিনি ফাউল, কবুতর ইত্যাদি ।ডিমের জন্য লেয়ার মুরগি, হাঁস ও কোয়েল ।দেশের বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠী এ পোল্ট্রি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ।বিশাল অংকের পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে এ শিল্পে।
এ পোল্ট্রি শিল্পের ভবিষ্যত ভালো ।কারণ দেশের মানুষের আয় বেড়েছে ।মানুষের আয় বাড়লে পুষ্টিকর খাদ্যের কথা ভাবে।দিন দিন ডিম ও মাংসের চাহিদা বেড়েই চলেছে। তাই আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার কথা যেমন ভাবি ঠিক তেমনি নিরাপদ খাদ্যের কথাও ভাবতে হয়।
নিরাপদ খাদ্য- –
আমি শুধু পোল্ট্রির বিষয়ে লিখব।নিরাপদ পোল্ট্রি জাত খাদ্য উৎপাদনের প্রধান শর্ত হলো নিরাপদ পরিবেশে পোল্ট্রি লালন পালন করা।এর জন্য দরকার উন্নত জীবনিরাপত্তা,আদর্শ খামার ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা,বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ , খামারে যথাযথ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, উপযুক্ত আলোকদান কর্মসূচি ইত্যাদি ।আরো যা দরকার আন্তর্জাতিক মানের একদিন বয়সের বাচ্চা এবং উপযুক্ততা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সঠিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা ।
সব মিলিয়ে মাংস বা ডিম উৎপাদনে মোট খরচের ৭০-৭৫ % খরচ হয় খাদ্যে ।তাই একদিন বয়সের বাচ্চার মান যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্যের মান।
খাদ্য ও বাচ্চা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ খামারিদেরকে দিন দিন বোকা বানাচ্ছেন ।খামারিরা যতো অভিজ্ঞ হচ্ছেন ততোই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ।
আমার মূল আলোচ্য বিষয় হলো পোল্ট্রি ফিড নিয়ে ।দেশে বর্তমানে অনেক বড় বড় প্রথিতযশা খ্যাতিমান পোল্ট্রি ফিড মিল গড়ে উঠেছে ।তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই ।কিন্তু দেশে এরূপ চিত্রও আছে দেশের আনাচে কানাচে ব্যাংগের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য পোল্ট্রি ফিড মিল ।যেগুলোর মান নিয়ে আছে যথেষ্ট সন্দেহ ।সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যা হওয়া দরকার তা অনেকাংশে ত্রুটিপূর্ণে ভরা।মানে কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই ।ঠিক এরূপ অবস্থা ।
আমি বেশ কয়েকটি ফিড মিল দেখেছি যার হাইজিনিক অবস্থা খুবই দুর্বল ।যা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন ।
যাইহোক আমি সেদিকে যাব না ।খাদ্যের উপকরণ নিয়ে আমাদের খামারিরা খুবই অসন্তোষ ।আছে ভেজাল,আছে নিম্ন মানের, আছে খাদ্য উপকরণ সমূহ রক্ষণা বেক্খন নিয়ে প্রশ্ন, আছে খাদ্য গোডাউনের মান নিয়ে ।এছাড়াও পোল্ট্রি ফিড পোকার আক্রমণ থেকে ঠেকাতে কীটনাশক প্রয়োগের ঘটনা; যা কোন ভাবেই কাম্য নয় ।
ফিড মিলারদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত ––
যারা পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন করেন তাদের নিজের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি খামারিদের স্বার্থও সংরক্ষণ করা উচিত ।ফিড মিলারদের যা করা দরকার তা হলো-
১।খাদ্যের গোডাউন হতে হবে আর্দ্রতামুক্ত,থাকতে হবে যথাযথ বায়ু প্রবাহের ব্যবস্থা, থাকতে হবে আলোর ব্যবস্থা; যাতে ইঁদুরের উপদ্রব ঠেকানো যায়,গোডাউনের ফ্লোর হতে হবে ড্যামপ্ররুফ ও ইঁদুর মুক্ত ।
২।খাদ্যের সকল প্রকার ব্যাগ অবশ্যই শুকনা ও শক্ত কাঠের তৈরি মাচায় সংরক্ষণ করতে হবে ।কোন অবস্থাতেই খাদ্যের ব্যাগ/বস্তা ফ্লোরে ফেলে রাখা যাবে না। এছাড়াও কাঠের তৈরি মাচার নীচে বায়ু ও আলো চলাচলের জন্য ফাঁকা রাখতেই হবে ।
৩।খাদ্যের গোডাউনে সহজে চলাচলের জন্য মাঝে ও চারধারে রাস্তা রাখতেই হবে ।খাদ্যের বস্তা কোন অবস্থাতেই যেন গোডাউনের দেয়াল স্পর্শ না করে।
৪।মিক্স খাদ্য কোন অবস্থাতেই খোলা রাখা যাবে না।অবশ্যই তা বস্তায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ।খাদ্যের ব্যাগে অবশ্যই উৎপাদনের ও মেয়াদ উৎতীর্ণের তারিখ বড় হরফে লিখতে হবে ।
৫।খাদ্যের উপকরণ বিশেষ করে ভূট্টার ময়েশ্চার অবশ্যই ১২-১৪ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে ।ময়েশ্চার বেশি হলে তা রৌদ্রে শুকানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৬। ফিড মিলারদের অবশ্যই নিজস্ব ফিড ল্যাব ও ফিড এনালাইসিসের জন্য অভিজ্ঞ ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিতে হবে ।
৭।খাদ্যের মান ঠিক রাখতে অবশ্যই গুণগতোমানের টক্সিন বাইন্ডার ও মোল্ড ইনহেবিটর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ।
৮।খাদ্যে যে কোনো উপায়ে আফলাটক্সিনের উপস্থিতি ঠেকাতে হবে।
ভেটেরিনারিনারিয়ানদের ভূমিকা –
১।খামারিদেরকে খোলা মনে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে।
২।সঠিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত ড্রাগ চয়েচের মাধ্যমে সঠিকভাবে পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
৩।যেহেতু খাদ্যে খরচ প্রায় ৭০-৭৫% এর কম/বেশি তাই খাদ্যের মানের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে;বিশেষ করে খাদ্যে আফলাটক্সিনের উপস্থিতি আছে কিনা।
৪।খামারিদেরকে পরামর্শ প্রদানকালিন কোন ভাবেই কারো সাথে আপোস করা যাবে না।
মনে রাখতেই হবে একজন অতি সাধারণ মানুষ ডাক্তার, উকিল ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে খুবই অসহায় ।এই তিন স্থানে সব কথা খুলে না বল্লেই সমস্যা আরো বেশি ঘনিভূত হয়।