টার্কির পক্স রোগ
টার্কি পক্স রোগ ( Disease of Turkey) : –
অন্যান্য পাখির ন্যায় টার্কিরও রোগ হয়। টার্কির রোগের মধ্যে টার্কি পক্স ভাইরাস একটি অন্যতম ভাইরাস জনিত রোগ ।টার্কির পক্স রোগ সকল টার্কি খামারির কাছে অতি সুপরিচিত একটি রোগ।
টার্কি পক্স ভাইরাস (Turkey Pox virus ) ঃ-
টার্কি পক্স ভাইরাস সাধারণত ধীরগতিতে বিস্তৃতি লাভকারি(Slow transmission disease) একটি ভাইরাস জনিত রোগ ।এ ভাইরাস সংক্রমণে টার্কির মাথায়,ঝুটিতে,চোখের কোণায়,ঠোঁটের কোণে,পালকবিহীন স্থানে বিশেষ করে চমড়ায় ব্যথাযুক্ত ( Inflammatory) বিভিন্ন আকারের গোটা ( Nodules) সৃষ্টি হয়। এ ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ফ্লকে টার্কি মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে টার্কির শারীরিক অবস্থা,ব্যবস্থাপনা ও ভাইরাসের তীব্রতার উপর ফ্লকে টার্কির মৃত্যুর হার কম বা বেশি হতে পারে। খামারের পরিবেশে মশার (Mosquito) উপদ্রব বৃদ্ধি পেলে পক্স ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
টার্কি পক্স ভাইরাসের বিস্তৃতি ( Transmission of Turkey Pox virus) : –
টার্কি পক্স ভাইরাস রোগ টার্কির যে কোন বয়সে হতে পারে। এ রোগ মশার (Mosquito) মাধ্যমে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। কিউলেক্স (Culex) ও এডিস ( aedes) জাতীয় মশার কামড়ে (Mosquito bites) মেকানিক্যাল ট্রান্সমিশন (Mechanical Transmission) ঘটে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন সময়ে এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হতে পারে। অনেক সময় টার্কি পক্স রোগ টার্কিতে প্রকট আকার ধারণ করে। টার্কি পক্স ভাইরাস ব্রিডার টার্কির ওভিডাক্ট (ovi -duct), ক্লোয়েকা ( cloaeca) এবং পায়ুপথের (Vent) চারপাশের চামড়ায়(Skin) লক্ষণ সমূহ দেখা দেয়। সাধারণত পুরুষ টার্কি (Tom) আগে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে তা স্ত্রী টার্কিতে সংক্রামিত হয়। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
সুপ্তিকাল (Incubation period of Turkey Pox virus) : –
টার্কির পক্স রোগের লক্ষণ ( Clinical Signs of Turkey Pox virus disease) : –
টার্কি পক্স ভাইরাস রোগে আক্রান্ত টার্কিতে সাধারণত তিন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ক) কিউটিনিয়াস ফর্ম,
খ) ডিপথেরিক ফর্ম ও
গ) কোরাইজালাইক ফর্ম।
কিউটিনিয়াস ফর্ম( Cutaneous form) : ––
মাথায় ও পালকবিহীন স্থানে বিশেষ করে চমড়ায়,পায়ে , আঙুলে ও পায়ুপথে (Vent) গোটা (Nodules) সৃষ্টি করে।
ডিপথেরিক ফর্ম (dephtheric form) : —
মুখের ভিতরে ও ন্যাজাল চেম্বারে (nasal chamber) এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। কোরাইজালাইক ফর্ম (Coryzalike lesion) : — এ জাতীয় লক্ষণে মাথা ফুলে কোরাইজালাইক হতে পারে। টার্কি পক্স ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হলে টার্কির দৈহিক ওজন হ্রাস ও বৃদ্ধি ব্যহত হয়। চোখে আক্রান্ত হলে টার্কি ঠিকমতো খেতে না পারলে দ্রুত দৈহিক ওজন হ্রাস পায়। ব্রিডার টার্কির এ রোগে আক্রান্ত হলে ডিমের উৎপাদন কমে যায় এবং ডিমের উর্বরতা (Fertility) হ্রাস পায়। রোগের জটিলতা কম থাকলে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত এবং রোগের জটিলতা বেশি থাকলে ৬-৭ সপ্তাহ এমনকি ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ স্থায়ী হতে পারে। এ ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও তীব্র সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর হার ৫০% পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসা (Treatment) : —–
এ ভাইরাসে আক্রান্ত টার্কির সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগের লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে উপযুক্ত পরিবেশ,ব্যবস্থাপনা,জীবনিরাপত্তার মাধ্যমে এ ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো সম্ভব। তবে পক্স ভাইরাসে আক্রান্ত টার্কিকে ভ্যাকসিন করা যাবে না। এমনকি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকলেও ভ্যাকসিন করা যাবে না। ভ্যাকসিন করতে হলে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ টার্কিকে ভ্যাকসিন করতে হবে।
টার্কির পক্স ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় ( prevention and Immunizations) : –
টার্কিকে পক্স রোগ থেকে রক্ষা করতে দুই ধরনের প্রতিষেধক (Vaccine) ব্যবহার করা হয়।
ক) ফাউল পক্স ভ্যাকসিন (Fowl pox Vaccine),
খ) পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন ( Pigeon pox Vaccine)
ফাউল পক্স ভ্যাকসিন (Fowl pox Vaccine) —
টার্কির ডানায় পালক ও শিরাবিহীন (wings web) স্থানে ফাউল পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। তবে এতে ভাইরাস মাথায় সংক্রামিত হতে পারে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের উপযুক্ত স্থান উরুর প্রায় মধ্যস্থলে (vaccination about midway on the thigh)ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য নির্বাচন করলে ভালো হবে।
প্রাথমিক অবস্থায় টার্কির বয়সের ২ – ৩ মাস বয়সে ফাউল পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু ব্রিডার টার্কির ক্ষেত্রে ডিম পাড়া শুরু হওয়ার আগে পূণরায় ভ্যাকসিন (Revaccination) করতে হবে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডিম পাড়া অবস্থায় প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর অন্তর পূণঃ পূণঃ ভ্যাকসিন (revaccination) অবশ্যই করা উচিত। তবে তা হতে হবে অবশ্যই পারিপার্শীক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ।
পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন (Pigeon pox Vaccine) : —–
টার্কির যে কোন বয়সে পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন করা যাবে।পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন করতে হবে উইং ওয়েব অথবা থাই স্টিক মেথড। যদি প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে ১ দিন বয়সের বাচ্চাকেও (Day old poult) পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন করা যেতে পারে। তবে ব্রিডার টার্কিকে ঠিকমতো ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা থাকলে ৮ সপ্তাহ বয়সে পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন করলে ভালো ইমিউনিটি গড়ে উঠবে। বাড়ন্তকালীন সময়ে (Growing period) ও ব্রিডার টার্কিকে অবশ্যই ডিম পাড়াকালীন সময়ে (Laying period) পূণঃ ভ্যাকসিন ( revaccination) করতে হবে।
পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগে লক্ষ্য রাখা দরকার যে,
ক) পূর্বের বৎসরে টার্কির ফ্লকে যদি পক্স ভাইরাসের সংক্রমণ হয় সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সিডিউল অনুযায়ী ফ্লকে ফাউল পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
খ) পূর্বের বৎসরে টার্কির ফ্লকে যদি পক্স ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে এবং ঐ ফ্লকে যদি পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ফ্লকে ফাউল পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। কারণ পিজিওন পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা টার্কি ফ্লকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immunity) বেশি দিন থাকে না।
গ ) এলাকায় যদি কোন টার্কি ফ্লকে পক্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকে;তবে সেক্ষেত্রে নিকটবর্তী খামারের টার্কিকে যথাযথ প্রটেকশনের জন্য ফাউল পক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে