টার্কির ফাউল কলেরা

টার্কির ফাউল কলেরা (Fowl Cholera in Turkey ): —

ফাউল কলেরা (avian cholera,avian pasteurallsis,avian haemorrhagic septicemia) একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত ছোঁয়াচে রোগ। যা সাধারণত গৃহপালিত ও বন্য পাখিকে ( Domestic and wild birds) আক্রান্ত করে। এ রোগ সেপ্টিসেমিক রোগ; যার ফলে আক্রান্ত পাখিতে উচ্চ আক্রান্তের হার ও উচ্চ মৃত্যুর হার পরিলিক্ষত হয় ।এ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো পাসচুরেলা মাল্টোসিডা ( Pasteuralla multocida ) নামক ব্যাকটেরিয়া।

ফাউল কলেরা (Fowl Cholera )পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই স্পোরাডিকেলি (Sporadically) রয়েছে। এ রোগ কোন এলাকায় যে কোন সময় যেখানে সেখানে,যখন তখন দেখা দিতে (outbreak ) পারে। কোন কোন সময় এ রোগের কারণে পাখির অধিক মৃত্যুর হার হতে পারে। ফাউল কলেরা গ্রীষ্মকালের শেষে,বর্ষাকালে ও শীতকালে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।

বিস্তার ( Transmission of Pasteuralla multocida ) : –
মুক্তভাবে চলাফেরা করে এমন সব পাখি ( free flying birds) বিশেষ করে চড়ুই,কবুতর,বয়স্ক পাখি (older birds) ও ইঁদুর এ রোগের অন্যতম বাহক হিসেবে কাজ করে। তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে ইঁদুরের ভূমিকা ১০% ।চড়ুই পাখি ও কবুতর কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়াও আক্রান্ত খামারের খাদ্য,খাদ্যের ব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম এ রোগের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে।

প্যাথোজেনেসিস ( Pathogenesis) :–
গৃহপালিত পাখি,গেম বার্ড,ছোট বন্য পাখি (small feral birds ) বিশেষ করে চড়ুই পাখি,কাক,ধ্বনি নকল করতে অভ্যস্ত এমন পাখি (Starling birds) ,গানের পাখি (Robin) সহ পানিতে বাস করে এমন সব পাখি (water fowl) এ রোগের প্রতি অধিক সংবেদনশীল। তবে টার্কি ,মুরগি,হাঁস,রাজহাঁসের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
ফাউল কলেরা টার্কির ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাড়ন্ত টার্কির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে ফ্লকের সমস্ত টার্কি কয়েকদিনের মধ্যে মারা যেতে পারে। খামারে পালিত টার্কি ফ্লকে এ রোগ অতি সহজেই বিস্তার লাভ করে। এ রোগ টার্কির বয়ঃসন্ধিকালে মারাত্মক হলেও পূর্ণ বয়স্ক টার্কির ক্ষেত্রেও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথম ১৯৩২ সালে টার্কিতে ফাউল কলেরা সনাক্ত হয় ম্যারিল্যান্ড নামক স্থানে। সেখানে টার্কির মৃত্যুর হার ছিল ১৭% ।পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের দিকে কোন কোন ফ্লকে টার্কির মৃত্যুর হার ছিল ১৭ থেকে ৬৪%।
অনেকেই মনে করেন ,পরিবেশগত ধকল (stress) বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তন ,পুষ্টি,অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা জনিত ধকল ইত্যাদি এ রোগকে প্রভাবিত করে।
মুরগির ক্ষেত্রে,ডিম পাড়া মুরগি (laying hen )এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে ১৬ সপ্তাহ বয়সের নীচে বয়স এমন বাড়ন্ত মুরগির জন্য এ রোগ সম্পূর্ণভাবে রেজিস্টান্স। এ রোগে আক্রান্ত মুরগির মৃত্যুর হার ০ থেকে ২০% ।ডিম উৎপাদন কমে যায় এবং খাদ্য ও পানি গ্রহণে অনীহা দেখা যায়। এতে মুরগির দৈহিক ওজন হ্রাস পায়।

লক্ষণ (Clinical Signs of infection ): –
তীব্র প্রকৃতির সংক্রমণ ঘটলে মুরগি/পাখি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুই হলো প্রথম লক্ষণ। পরবর্তীতে জ্বর,অরুচি,পালক ঝুলে পড়া,মুখ দিয়ে লালা ঝড়া,ডায়রিয়া ঝিমানোভাব এ রোগের লক্ষণ। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়,মৃত্যুর পূর্বে পালকবিহীন স্থান বিশেষ করে মাথার ঝুটি ও ওয়াটলে সায়ানোসিস (Cyanosis) পরিলক্ষিত হবে। পায়খানা প্রাথমিকভাবে পাতলা ও পর সাদাটে হবে।পরবর্তীতে সবুজাভাব পায়খানার সাথে অতিরিক্ত মিউকাস থাকবে।

পোস্টমর্টেম পরীক্ষা (Post mortem Lesions )ঃ —
সাধারণত এবডোমিনাল ভিসারার শিরায় হাইপারেমিয়া থাকবে। পেটিকিয়াল (petecchial haemorrhage) ও ইকাইমোটিক (ecchymotic haemorrhage) হেমোরেজ দেখা যাবে । বিশেষ করে সাবইপিকার্ডিয়াল (subepicardial) ও সাবসিরোসাল (subserosal) হেমোরেজ ফুসফুস,এবডোমিনাল ফ্যাট,ইনটেস্টাইনাল মিউকোসায় পরিলক্ষিত হবে। পেরিকার্ডিয়াল ও পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড বেড়ে যাবে।

লিভার ফুলে যাবে ও আকারে বড় হবে। লিভারে নেক্রোটিক ফোকাই থাকবে। টার্কির ক্ষেত্রে,টার্কির ফুসফুস ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবে ।টার্কিতে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। ডাইজেস্টিভট্রাক্ট,ফ্যারিংস,ক্রোপ এবং ইনটেস্টাইনে প্রচুর পরিমাণে থকথকে মিউকাস থাকবে।

ডিম পাড়া মুরগির ক্ষেত্রে, ডিম পাড়া মুরগির ওভারিয়ান ফলিকল ফেটে যাবে,ইয়োক মেটেরিয়াল পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে প্রবেশ করবে।

টার্কির ক্ষেত্রে,আক্রান্ত টার্কির টর্টিকলিস ( Torticollis ) দেখা যাবে।

চিকিৎসা ( Treatment ) : –
যেহেতু এ রোগের জীবাণু গ্রাম নেগেটিভ। তাই গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও সালফোনেমাইড জাতীয় উপাদান ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Prevention and control measures of Fowl Cholera ) :-
উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা,উপযুক্ত স্যানিটেশন,খামারের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা,খামারে ইঁদুর ও টিকটিকির উপদ্রব ঠেকানো,বয়স্ক পাখি যথাসময়ে কালিং করা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
খামারের আশেপাশে কুকুর,শেয়াল,বিড়াল শূকর ইত্যাদি প্রাণির ঘোরাফেরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

টার্কি জোনের ক্ষেত্রে ,যে অঞ্চলে টার্কির আধিক্য বেশি সেখানে টার্কি খামারের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে চলাফেরা করে এমন সব পাখির আনাগোনা বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ টার্কি দ্রুতই সুস্থ টার্কি থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে। মৃত টার্কি মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে কিংবা মৃত টার্কি পুরে ফেলতে হবে। নতুন করে টার্কি বাচ্চা তুলতে হলে খামার ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে জীবাণু নাশক দ্বারা স্প্রে করে খামারের অভ্যন্তরে ও বাহিরের জীবাণু ধ্বংস করতে হবে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাউল কলেরা রোগের লাইভ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। তাই সঠিক সময়ে সুস্থ টার্কিকে ফাউল কলেরা রোগের ভ্যাকসিন করতে হবে।